বইপ্রেমী ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন

 . মো. মোয়াজ্জেম হোসেন





-প্রতিদিনই একগাদা বই নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। গ্রাম থেকে শুরু করে নরসিংদী শহরের অলিগলিতে বই বিলি করেন তিনি ।  বই বহনের জন্য সাথে থাকে একজন লোক । আধুনিক যুগে এধরনের মানুষ পাওয়া দুষ্কর । তাছাড়া এত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি প্রতিদিনই বই বিতরণ করে যাচ্ছেন।  তিনি – কখনো সকালে ,কখনো বিকালে ,কখনো বা সন্ধার পর বই বিতরণ করেন। কোনদিন গ্রামে , কোনদিন শহরে । আগের সপ্তাহের বই ফেরত নিয়ে নতুন বই পড়তে দেন। বইপ্রেমী, আলোর ফেরিওয়ালা, জ্ঞানের ফেরিওয়ালা হিসেবে তিনি ইতোমধ্যে  এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত । বলছিলাম শিক্ষাবিদ, সমাজচিন্তক, সংগঠক, পরিবেশবাদী, লেখক ও গবেষক  ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের কথা ।

সাদামাটা পাঞ্জাবী পরা হালকা পাতলা একজন মানুষ গাঁয়ের কোনো মেঠো রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছেন বই হাতে যিনি নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার  খৈনকুট গ্রামের মানুষের কাছে খুবই পরিচিত। তাছাড়া নরসিংদী শহরের প্রয় সবাই তাঁকে চেনেন।  নরসিংদী শহরের প্রাণ কেন্দ্র ব্রাহ্মন্দীতে শিক্ষা বিস্তারের অনন্য প্রতিষ্ঠান নরসিংদী প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা- চেয়ারম্যান ও নরসিংদী পাবলিক লাইব্রেরি, গ্রীন বাংলাদেশ ও নরসিংদী জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি ।


জন্ম পরিচয়ঃ-

ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন এর জন্ম ১৯৭৫ সালে ১৮ এপ্রিল নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলাধীন খৈনকুট গ্রামে।  পিতা: মো: সামসু উদ্দিন, মাতা: খোদেজা বেগম।


শিক্ষা জীবনঃ-

খৈনকুট প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তি পান খৈনকুট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবং এস.এস.সি-তে ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন ঐ বিদ্যালয় থেকে। নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি-তে ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। আমেরিকান কবি ওয়াল্ট হুইটম্যানের উপর পি.এইচ.ডি করেন।


কর্ম জীবনঃ-

ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভের পর শিক্ষকতা পেশায় কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি একজন মৌলিক গবেষক। অত্যন্ত পজেটিভ চিন্তাধারার অধিকারী এই মানুষটি বহুগুণের অধিকারী। তিনি ছাত্র জীবন থেকে লেখালেখি করেন। এছাড়াও তিনি একজন সাংগঠনিক মানুষ। বাংলাদেশ ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টিচার্স এসোসিয়েশনের একজন সক্রিয় সদস্য।


কৃতিত্বঃ-

তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ড. এম এইচ ফাউন্ডেশন, শিক্ষা বিস্তারে অনন্য প্রতিষ্ঠান নরসিংদী প্রেসিডেন্সি কলেজ, নরসিংদী পাবলিক লাইব্রেরি, শিক্ষানুরাগী সামসুদ্দিন পাবলিক লাইব্রেরি, নরসিংদী জাদুঘর নরসিংদী কবি-লেখক পরিষদ, নরসিংদী সাহিত্য একাডেমি । এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে সক্রিয় ভাবে সম্পৃক্ত আছেন। তিনি শিবপুর জনকল্যাণ সমিতির স্থায়ী সদস্য, নরসিংদী ডায়াবেটিস সমিতির আজীবন সদস্য, রোটারী ক্লাব অব নরসিংদী ও আমরা নরসিংদীবাসী সংগঠনের সদস্য । বাংলাদেশ মডেল স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান, সেস্ডা সংগঠনের উপদেষ্টা ।

গ্রিন বাংলাদেশ নামে একটি পরিবেশবাদী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।  তিনি তার জীবদ্দশায় এক কোটি গাছের চারা রোপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চারা রোপনের মাধ্যমে তার এই লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছেন। ৫ অক্টোবর ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নরসিংদী পাবলিক লাইব্রেরি । এখানে বই এর সংখ্যা ৫০০০ অধিক । 

২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন  খৈনকুট গ্রামে বাবার নামে শিক্ষানুরাগী সামসুউদ্দিন পাবলিক লাইব্রেরি।  তিনি জানান, বই বিতরণের জন্য এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন বিকল্প বই বিতরণ কেন্দ্র তৈরি করেছেন। সেখান থেকে স্থানীয় লোকজনকে বই দেওয়া হয়। পড়া বই তাঁরা নিজেরাই আবার ফেরত দিয়ে নেন নতুন বই। প্রেরণামূলক , মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক, ভাষা আন্দোলন, গল্প, আত্মজীবনী, অভিধানসহ নানা ধরণের বই বিতরণ করা হয় ।ব্যাগভর্তি বই নিয়ে ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে বই দেন । কারও পছন্দ রবীন্দ্রনাথ, আবার কারো নজরুল কিংবা শরৎচন্দ্র। সব বয়সের সব পাঠকের হাতেই তিনি তুলে দেন প্রিয় বইটি। নিজের গ্রাম থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে শহরে ও জ্ঞানের আলো ফেরির কাজ করেন তিনি। পাঠক  গ্রামের যুবক-যুবতী, কিশোর, বৃদ্ধ এমনকি গৃহবধূরাও। শহরের পাঠক ও নানা পেশার লোকজন ।

 ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘ঊষর মরুর ধূসর বুকে বিশাল শহর গড়, একটি জীবন সফল করা তার চেয়ে অনেক  বড়ো’ । একটি বই পড়ে যদি একজন মানুষ সফল হয় তাহলে বই বিলি সার্থক হবে বলে আমি মনে করি।



নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার খৈনকুট, ইটনা, চাঁদপাশা, গলিকান্দা, রামপুর, নোয়াদিয়া, সৃষ্টিগড়, ভঙ্গারটেক, জানখারটেক,কামালপুর, মাকাল্লা, আগরপুর, চৈতন্যা, আটাশিয়া, যোশর,কুন্দারপাড়া, নাওহালা, কামারটেক, জয়নগর ,ছোটাবন্দ, মরজালসহ এলাকায় বই বিতরণ করা হচ্ছে ।  শীঘ্রই আরো নতুন এলাকায় বই বিতরণ করা হবে। 



তিনি  নিজে একজন সেরা পাঠক । বই পড়াকে খুব গুরুত্ব দেন। নিজের ভালোলাগা থেকে কাজটি শুরু করেন। এর পেছনে একটি গল্প আছে। গল্পটা এরকম যে  ১৯৮৫  সালে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন তখন তার স্যার হাবিবুল্লাহ তাকে পাঠ্য বইয়ের বাইরের উৎসাহিত করেন ।


সে থেকে পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়া শুরু করেন । গড়ে তুলেন ব্যক্তিগত বিশাল সংগ্রহশালা । তাছাড়া নরসিংদীর প্রাণকেন্দ্রে গড়ে তুলেন ‘নরসিংদী জাদুঘর’। বই মানুষকে ভালো মানুষ করে। বই আলোর দিকে নিয়ে যান আমাদের। বই আলোর পথ দেখান। বই হলো শ্রেষ্ঠ উপহার৷ কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে অন্যান্য জিনিসের পাশাপাশি তিনি উপহার দেন বই। সামাজিক সকল অনুষ্ঠানে বই উপহার  এর প্রচলন করতে চান তিনি ।  তিনি বাংলাদেশ বেসরকারি গণগ্রন্থাগার পরিষদের নরসিংদী জেলার সভাপতি ।


বইপ্রেমী ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন  বইপ্রেমী ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন Reviewed by matir mon on August 31, 2021 Rating: 5

No comments:

ভালোবসার শেষ নিবেদন

  ভালোবসার শেষ নিবেদন আমার আবেগ, অনুভূতি তুই সব কিছুই জানোস, নতুন করে কিছু বলার নাই । একচুয়্যালি, আমি তোর মতো করে কোনো মেয়ের সাথে মিশি নাই ।...

Powered by Blogger.